Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, December 14, 2017

ইসকন ভক্তরা কেন সকলের হাতের রান্না খায় না??

উত্তর:- সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে এখনও পর্যন্ত দেখা
যায় ব্রাহ্মণরা সাধারণত কোন বৈশ্য, শূদ্রদের গৃহে
গেলে নিজে রান্না করে খান, কারও হাতের রান্না
করা খাবার গ্রহন করেন না । সেক্ষেত্রে কি বলবেন ? এ
নিয়মতো ইসকন তৈরি করেনি । তারা শাস্ত্র সিদ্ধান্ত
অনুসারে এটি এখনও করছে । সবাই মানুষ তাহলে ভিন্ন
প্রেক্ষাপট কেন ? অনেক বৃদ্ধ/বৃদ্ধা এখনও আছে, যারা
অন্য ধর্মাবলম্বীদের হাতের রান্না খান না কিংবা
অহিন্দুদের চা-দোকানে কিছু খান না । এর কারন কি ?
সুপ্রাচীন সনাতন ধর্মের ইতিহাস পর্যবেক্ষন করলে
দেখা যায় প্রাচীন হিন্দুরা নিরামিষ দ্রব্য রান্না করে
। ভোগ নিবেদন করে তবেই খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করত ।
কালাতিক্রমে সেই সাত্ত্বিক প্রথা অদৃশ্য হয়ে যথেচ্ছা
খাবার গ্রহনের প্রথা চালু হয় । ইসকন বৈদিক ভাবধারা
অনুসারে আবার সেই সাত্ত্বিক প্রথা শুধু বাংলাদেশ/
ভারত নয় সারাবিশ্বে পুনরায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা
করছে । বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে এর
প্রকৃত কারন ব্যাখ্যা করা যায় । কারো চেতনা যদি
অত্যন্ত কলুষিত হয় এবং সেই ব্যক্তি যখন রান্না করে
তখন তার ঐ অবস্থায় চিন্তা চেতনা ও কলুষতা সমূহ তারই
তৈরি রান্নার দ্রব্যে প্রবেশ করে । আর তখন সেটি যদি
কেউ গ্রহন করে, ঐ খাদ্য দ্রবের মাধ্যমে সেই কলুষিত
চেতনাগুলি তার হৃদয়ে প্রবেশ করে তাকেও কলুষিতকরে ।
উদাহরনস্বরূপ কোন কামার্ত ব্যক্তির রান্না করা খাবার
কেউ গ্রহণ করে তবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই ব্যক্তির
মধ্যে যৌনউদ্বেগ প্রকাশ পাবে । পক্ষান্তরে সদগুণাবলী
সম্পন্ন কৃষ্ণভক্তের হাতের রান্না করা প্রসাদ যদি কেউ
গ্রহন করে তবে গ্রহণকারী সদগুণাবলী সম্পন্ন হয় । এটি
একটি বিজ্ঞান । ৫০০ বছর পূর্বে শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু এই
বিজ্ঞানটি দিয়ে গেছেন ।
‘বিষয়ীর অন্ন খাইলে মলিন হয় মন ।
মন মলিন হৈলে নহে কৃষ্ণের স্মরণ ।। চৈ. চ.
বিষয়ী বলতে তাদেরই বোঝায়, যাদের বিষয় ভোগ তৃষ্ণা
প্রবল । শ্রীলপ্রভুপাদ বিষয়ী তাদেরকে বলেছেন, যারা
মাছ, মাংস খায়, নেশা করা, অবৈধযৌনসঙ্গ এবং জুয়া
কখনও বর্জন করতে চায়না, তাদের চরিত্র কলুষিত হওয়ার
ফলে তারা সবসময় ভগবানের ও ভক্তেরবিরোধী ।
কপটাচারী ও কৃপণ প্রকৃতির । অতএব তাদের কাছে
ভক্তরা কিছুই গ্রহণ করে না ।
ভগবানের ভক্তরা নিবেদিত ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ
করেন না এটিও আরেকটি কারণ যে, বাইরের কোন কিছুই
তারা গ্রহণ করেন না কিংবা আমিশাষী মা-বাবার
রান্না করা দ্রব্যও । কেননা ভগবদগীতার ৩য় অধ্যায়ের
১৩নং শ্লোক বর্ণনা করা হয়েছে ।
যজ্ঞাশিষ্টাশিনঃ সন্তোমুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষ্যৈঃ ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘংপাপা যে পচন্ত্যাত্মিকারণাৎ ।।
‘ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তাঁরা
যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহণ করেন । যারা কেবল
স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য
অন্নাদি পাক করে, তারা কেবল পাপই ভোজন করে ।
অপরদিকে ৯ অধ্যায়ের ২৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি ।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ।।
‘যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে
পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পণ করেন, আমি তার সেই
ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।
এখানে ‘বিশুদ্ধচিত্ত’ শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । জীবকে
বিশুদ্ধ চিত্তের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই কৃষ্ণভাবনা
অবলম্বন করতে হবে, চার নিয়ম পালন পূর্বক তাকে অবশ্যই
হরিনাম অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিদিন হৃদয় মার্জন
করতে হবে । তবেই একজন কৃষ্ণভক্ত বিশুদ্ধচিত্তের
অধিকারী কারো নিবেদিত কৃষ্ণ প্রসাদ নিঃসংকোচে
গ্রহণ করেন সে যদি প্রতিদিন প্রীতি সহকারে
ভগবানকে নিবেদন করেন তবে তার হাতে খেতে আপত্তি
থাকবে কেন?
অতএব, যারা এই বিজ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন তারা
আর এসময় জল্পনা – কল্পনা মূলক ধ্যান ধারণা থেকে
মুক্ত হয়ে অনতিবিলম্বে এটি অনুশীলন করবেন ।
পক্ষান্তরে যারা এর বিরোধিতা করে তারা ভগবান
এবং ভক্তচরণে অপরাধ হেতু নিশ্চিত নরক গামী হবেন ।
এটিই শাস্ত্রের ভাষ্য ।
হরে কৃষ্ণ।।

No comments:

Post a Comment